কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রসুন
রসুন, যাকে ইংরেজিতে Garlic বলা হয় । রসুন আমাদের পরিচিত একটি উপাদান। আমরা সাধারণত রান্নার কাজে এটি ব্যবহার করে থাকি। রসুন রান্নার স্বাদ বাড়ানোর একটি অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু এর গুণাবলী শুধুমাত্র রান্নাতেই সীমাবদ্ধ নয়, রসুন স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
এই ব্লগটিতে আমরা জানতে পারবো রসুন খাওয়ার উপকারিতা, কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম, এবং রসুন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
রসুন সাধারণত রান্নার কাজে বেশি ব্যবহার করা হলেও রসুনের অনেক গুণ রয়েছে। নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
কাঁচা রসুনে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঁচা রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, ফ্লু, জ্বর ইত্যাদি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল: কাঁচা রসুনে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
২. হজমশক্তি বৃদ্ধি:
কাঁচা রসুন হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যালিসিন হজম রসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
অ্যালিসিন: অ্যালিসিন পেটের গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
প্রোবায়োটিক: কাঁচা রসুনে প্রোবায়োটিক থাকে যা হজম প্রক্রিয়ার জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
কাঁচা রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যালিসিন রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
অ্যালিসিন: অ্যালিসিন রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
নাইট্রিক অক্সাইড: কাঁচা রসুন নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৩. কোলেস্টেরল কমাতে:
রসুন খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে: রসুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে এবং রক্তনালীতে প্লাক জমা হওয়া থেকে বিরত রাখে।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে: রসুন কিছু ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
৬.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শরীরে ইমিউন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৭. সর্দি-কাশি প্রতিরোধে: রসুন সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদানগুলি জীবাণু এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
৮. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে: রসুন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৯. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী: রসুন ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে এবং চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।
রসুন খাওয়ার নিয়ম
→ রসুন কাঁচা, রান্না করে বা স্যুপলিমেন্ট হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
→ রসুন কুচি করে তরকারি, মাছ, মাংস, ভাত ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
→ রসুনের তেল বানিয়ে ত্বক ও চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে।
রসুন সংরক্ষণের উপায়:
→ রসুন শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।
→ রসুন একটি এয়ারটাইট কন্টেইনারে রেখে ফ্রিজেও সংরক্ষণ
কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম:
পরিমাণ:
> প্রতিদিন খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে।
> যারা প্রথমবার কাঁচা রসুন খাচ্ছেন তারা অল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু করুন।
> অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা রসুন খাওয়া পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যার কারণ হতে পারে।
রসুন কখন খাবেন?
→ সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
→ রাতের খাবারের আগেও রসুন খাওয়া যেতে পারে।
→ যাদের পেট খারাপের সমস্যা আছে তারা খাবারের সাথে রসুন খেতে পারেন।
রসুন কীভাবে খাবেন?
* রসুন কুচি করে খাওয়া যেতে পারে।
* রসুনের টুকরো মধুর সাথে খেলে স্বাদ ভালো হয় এবং পেট খারাপের সম্ভাবনা কমে।
* রসুনের তেল বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
কিছু টিপস:
→ রসুন খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
→ রসুন খেলে মুখের গন্ধ খারাপ হতে পারে। তাই রসুন খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
→ কাঁচা রসুনে রসুনের সকল পুষ্টি উপাদান থাকে।
→ রান্না করলে রসুনের কিছু পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।
→ কাঁচা রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
→ কাঁচা রসুন হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
→ কাঁচা রসুন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
খালি পেটে রসুন খেলে কি হয়?
→ প্রতিদিন খালি পেটে ১-২ কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া যেতে পারে।
→ যারা প্রথমবার কাঁচা রসুন খাচ্ছেন তারা অল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু করুন।
→ অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা রসুন খাওয়া পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যার কারণ হতে পারে।
সতর্কতা:
* গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের রসুন অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
* যাদের রক্তপাতের সমস্যা আছে তাদের রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
* রসুন খেলে কিছু লোকের পেট খারাপ হতে পারে।
Smile Bangla এর আজকের এই ব্লগে রসুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যদি ব্লগটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এবং আরো অনেক informative তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ