মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বর্তমান মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে খুবই আলোচিত একজন ব্যক্তি হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। এই পোস্টে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জীবনী, শিক্ষা, রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পারিবারিক জীবন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে ঠাকুরগাঁও জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মির্জা রুহুল আমিন । তিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে বহুবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবং স্বাধীন বাংলাদেশ তিনি বিএনপি দলের সাথে যুক্ত ছিলেন।
এবং মায়ের নাম মির্জা ফাতেমা আমিন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাহাত-আরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধে হন। রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। এবং ঢাকার একটি বিমা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রাহাত আরা বেগম দম্পতির রয়েছে দুই মেয়ে। বড় মেয়ের নাম মির্জা শামারুহ, ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ।
মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বিষয় হিসেবে যোগদান করেন। এবং তিনি বহুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করেছেন। মির্জা শামারুহ তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত আছেন। তিনি সেখানে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রী জীবনে তিনি অনেক মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত হন। এবং বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জন্ম কত সালে?
২৬ শে জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিক্ষাগত যোগ্যতা
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বিসিএস ক্যাডার?
উওর:- হ্যা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৭২ সালে বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবং তিনি ঢাকা কলেজে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি কলেজে অধ্যাপনা করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পেশা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্যারিয়ারের শুরুতে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। এবং বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের পরিদর্শন ও আয় ব্যয় পরীক্ষণ অধিদপ্তরের একজন নিরীক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী এস এম বারির ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৮২ সালে হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আরোহন করার আগ পর্যন্ত তিনি এসএম বারির ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এস এম বারি পদত্যাগ করার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার পুরনো পেশা শিক্ষকতায় ফিরে যান। তখন তিনি ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেন।
আরো পড়ুন: শারীরিক পরিবর্তনে কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রাজনৈতিক জীবন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক আগে থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বর্তমানে যা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নামে পরিচিত একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এবং এই সংগঠনটির এস এম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করেন এবং তিনি নির্বাচিত হন। জেনারেল এরশাদ এর সামরিক শাসন এর বিরুদ্ধে যখন সারা দেশে আন্দোলন চলছিল তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)তে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার বিএনপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৯৬ সালে সপ্তম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও ১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পান। এবং তিনি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।
এবং ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রমেশচন্দ্র সেনের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এবং তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। একই বছর নভেম্বরে বিএনপি যখন মন্ত্রিসভা গঠন করে তখন প্রথমে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এই পদের দায়িত্ব পালন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রমেশচন্দ্র সেনের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও ১ একই সাথে বগুড়া ৬ আসনে বিএনপি'র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন। এবং তিনি বগুড়া ৬ আসনে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি শপথ গ্রহণ না করার কারণে নির্বাচন কমিশন তার আসন টি 0 বলে ঘোষণা করে। এবং একই আসনে উপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।এই সম্মেলনের মাধ্যমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি'র জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। একই পদে উনার আগে তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সম্মেলনে তারেক রহমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পরিচিতি লাভ করে।
২০১১ সালের ২০শে মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করার পর বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন।
২০১৬ সালের ১৯শে মার্চ বিএনপি'র ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
এবং তিনি বর্তমানে বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরো পড়ুন: মোবাইল দিয়ে অনলাইন থেকে আয় করার পাঁচটি সহজে পাই